- সকল রাসায়নিক যৌগই কম অথবা বেশি ক্ষতিকর। কিছু কিছু রাসায়নিক পদার্থ সত্যিকার অর্থেই বিপজ্জনক। তাই কতগুলো সতর্কতা রসায়নের শিক্ষার্থীদের জানা অতীব প্রয়োজনীয়। যেমন ল্যাবরেটরিতে নিজের ও সহপাঠীর সুরক্ষার কৌশল, গ্লাসসামগ্রী ব্যবহারবিধি, নির্ভুল পরিমাপ প্রক্রিয়া, পরিষেশের ওপর রাসায়নিক দ্রব্যের ক্ষতিকর প্রভাব এবং প্রভাব হ্রাসকরণ উপায়, রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমিত ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি যেহেতু ল্যাবরেটরিতে আগুন নিয়ে কাজ প্রায়ই করতে হবে বা বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করতে হবেই, তাই সর্বোচ্চ সচেতনতার পাশাপাশি দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষার কৌশল জেনে রাখতে হবে।
- রাসায়নিক দ্রব্যের সংরক্ষণ ও ব্যবহারের সর্কতামূলক ব্যবস্থা জানা থাকা প্রয়োজন। ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থের ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রা কিরূপ, উপাদান বিষাক্ত, ক্ষারক, ক্ষয়কারক, ক্যান্সার সৃষ্টিকারক, বিস্ফোরক না দাহ্য সে বিষয়ে অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ ধারণা থাকা প্রয়োজন। ল্যবরেটিতে কোন কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে তা প্রতিরোধ করার মত প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এসব নিরাপত্তা সামগ্রীর ব্যবহারবিধি সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান ও ব্যবহারের দক্ষতা ও কৌশল জানা প্রয়োজন।
- আধুনিক রসায়নের জনক অ্যান্টোনিও লরেন্ট ডি ল্যাভোয়সিয়ে (২৬ আগস্ট ১৭৪৩-৮ মে ১৭৯৪)
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
ফাইজা টাইট্রেশন কাজের জন্য অক্সালিক এসিডের প্রমাণ দ্রবণ পিপেট দিয়ে ওঠানোর সময় কিছু দ্রবণ মুখে প্রবেশ করলে সে তা গিলে ফেলে।
একজন শিক্ষার্থী ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় তার হাতে গাঢ় H2SO4 এসিড পড়ে গেল, ল্যাব শিক্ষক তার হাতে 5% মাত্রার 'X' দ্রবণ দিয়ে ধুয়ে দিলেন। পরে তাকে ডাক্তারের নিকট পাঠালেন।
H2SO4 এসিড ল্যাবরেটরিতে ও শিল্পক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত হয়। এটি একটি নিরুদক ও জারণধর্মী এসিড।
- অ্যাপ্রোন
ল্যবরেটরিতে কাজের সময় ঢিলা জামাকাপড় ব্যবহার করা উচিত নয়। প্রত্যেক ছাত্রছাত্রী ল্যবরেটরিতে প্রবেশ করার পূর্বে সাদা অ্যাপ্রন পরিধান করে নিতে হবে।
এর ফলেঃ
১। শিক্ষার্থীর মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে
২।রাসায়নিক দ্রব্য থেকে কলেজ ড্রেস সুরক্ষা
৩।রাসায়নিক দ্রব্যের স্পর্শ থেকে শরীরের ত্বক রক্ষা পায়
- Safty Glass
উদ্বায়ী রাসায়নিক পদার্থ নিয়ে কাজ করার সময় চোখে নিরাপদ চশমা ব্যবহার করতে হবে
এতে করেঃ
১।চোখে ক্ষতিকর পদার্থ থেকে রক্ষা পায়
২।নদুর্ঘটনায় ও রাসায়নিক ল্যাবে বিষাক্ত ধোঁয়ার সৃষ্টি হতে পারে যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- মাস্ক
CO2 ,NO2, NH3, SO2 ও অন্যান্য ক্ষতিকর গ্যাস উৎপন্ন হয়। এসব গ্যাসের প্রভাবে শ্বাসকষ্ট, মাথা ধরা ও চোখে পানি আসা, জ্বালা করা ইত্যাদি ঘটে। মাস্ক ব্যবহারে এসব ক্ষতির মাত্রা কমানো যায়।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
ল্যাবরেটরিতে শিক্ষার্থীর কর্মকান্ড ও করণীয় নিম্নরুপ হতে পারে:
১। সুরক্ষা প্রস্তুতি গ্রহণ করা: ল্যাবরেটরিতে প্রথম করণীয় হল সুরক্ষা প্রস্তুতি নেওয়া। একটি ল্যাব একটি সমস্যার জন্য হুবহু কপি হতে পারে, কিন্তু একজন মানুষের জীবন একটি সমস্যার জন্য অনন্ত। তাই শিক্ষার্থীকে প্রথমেই সুরক্ষা সংক্রান্ত প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এটি প্রয়োজনীয় উপকরণ ব্যবহার করা এবং সুরক্ষার জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম ও প্রদর্শন সম্পর্কে শিক্ষার্থীকে জানানোর মতো বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
২। যাচাই করা: ল্যাবরেটরি কাজ করার পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে সব উপকরণ সঠিকভাবে কাজ করছে এবং কেমিস্ট্রি এবং ফিজিক্স এর নীতিমালা অনুযায়ী সমস্যাগুলি সমাধান করা যাচাই করা।
ল্যাবরেটরিতে শিক্ষার্থীর কর্মকান্ড ও করণীয় হলো নিম্নলিখিত মধ্যে সম্পাদন করা হতে পারে:
১। ল্যাবরেটরিতে প্রবেশ করার আগে সমস্ত নির্দেশনা ও সুপারিশ পূর্ণ করতে হবে।
২। ল্যাবরেটরি পরিষেবা করা উচিত এবং উপযুক্ত পরিস্থিতি বজায় রাখতে হবে।
৩। নিরাপদ ও প্রয়োজনীয় প্রয়োগকৃত সরঞ্জামসমূহ ব্যবহার করতে হবে।
৪। পরীক্ষামূলক কাজ করার সময় শক্তিশালী পার্শ্ববর্তী ও নিরাপদ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
৫। সম্পূর্ণ কার্যক্রমে প্রাথমিক অধ্যয়ন এবং উচিত প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
৬। সমস্ত কার্যক্রমে উপস্থিত সমস্ত উপকরণ, সরঞ্জাম, উপাদান এবং ইনস্ট্রুমেন্টসমূহ সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে।
৭। পরীক্ষামূলক কাজ করার সময় নিরাপদ পরিবেশ বিবেচনা করতে
গ্লাস বা কাঁচের উপাদান অনুসারে ২ ভাগে ভাগ করা যায় -
১. Soft গ্লাস বা কোমল গ্লাস
ব্যবহার:- কাচনল, বিকার, ওয়াচ-গ্লাস, ফানেল, রি-এজেন্ট বা বিকারক বোতল, লিবিগ শীতক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়
২. শক্ত গ্লাস বা পাইরেক্স গ্লাস
ব্যবহার:-বিকার, কনিকেল ফ্লাস্ক, পিপেট, ব্যুরেট, মেজারিং সিলিন্ডার, মেজারিং ফ্লাস্ক বা আয়তনিক ফ্লাস্ক, গোলতলি ফ্লাঙ্ক, পাতন ফ্লাস্ক ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- গ্লাসসামগ্রীর মধ্যে গ্লাস টেস্টটিউব, বিকার, ফানেল, কনিকেল ফ্লাস্ক, মেজারিং বা পরিমাপক ফ্লাস্ক, পিপেট, ব্যুরেট, মেজারিং সিলিন্ডার, গোলতলি ফ্লাস্ক, গ্লাস রড, গ্লাস টিউব, লিবিগ শীতল ইত্যাদি। ল্যবরেটরিতে কাজের সময় এ সব গ্লাসের তৈরি যন্তপাতি আঘাতে সহজে ভেঙে যায়। ভাঙা গ্লাস ধারালো হয় এবং গায়ে লাগলে চামড়া কেটে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে।
১. ব্যবহারের পূর্বে গ্লাস সামগ্রীতে ফাটল আছে কিনা তা দেখে নিতে হবে।
২. নোংরা গ্লাস সামগ্রী ভালোভাবে ধুয়ে শুষ্ক করে নিতে হবে।
৩. দ্রবণ আলোড়িত করার জন্য গ্লাসরড ব্যবহার করলে গ্লাসরডের মাথায় রাবার প্যাড লাগিয়ে নিতে হবে।
৪. ইলেকট্রিক বা গ্যাস বার্নারে গ্লাস সামগ্রীকে সরাসরি তাপ দেওয়া যাবে না।
৫. গ্লাসের দ্রবণে তাপ দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হয়ে এবং সুষম ভাবে তাপ দিতে হবে।
৬. হোল্ডার দ্বারা গ্লাস টিউব আটকানোর সময় অধিক চাপ দেওয়া যাবে না।
৭. গ্লাস সামগ্রীর বাইরের দেয়ালে পানি থাকা অবস্থায় তাপ দেওয়া যাবে না।
৮. অব্যবহৃত গ্লাস সামগ্রীকে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে।
ল্যাবরেটরি, যন্ত্রপাতি এবং গ্লাসসামগ্রী পরিষ্কার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যাতে সেখানে কাজ করার সময় পরিষ্কারতা বজায় রাখা যায়। একটি পরিষ্কার ল্যাব বা যন্ত্রপাতি সঠিকভাবে কাজ করতে হলে এগুলি পরিষ্কার এবং নিরাপদ থাকতে হবে। এই কাজটি করার জন্য কিছু কৌশল নিচে দেওয়া হল।
১। যন্ত্রপাতি পরিষ্কার করার জন্য উপযুক্ত পরিষ্কারক ব্যবহার করুন। এটি যন্ত্রপাতির পৃষ্ঠভূমি এবং বিভিন্ন অংশ পরিষ্কার করতে সহায়তা করবে।
২। যন্ত্রপাতি বা ল্যাবরেটরি ফরসেলিন দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। ফরসেলিন দিয়ে পরিষ্কার করতে হলে, নিচের ধাপগুলি অনুসরণ করুন:
- সবচেয়ে প্রথমে, যন্ত্রপাতির সাথে সংযুক্ত যেকোনো সংযোগস্থল সরিয়ে নিন।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত গ্লাসসামগ্রী ধৌতকরণের জন্য নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করা উচিত:
সবথেকে প্রথমে স্বচ্ছ জল দিয়ে গ্লাসসামগ্রী ধুয়ে নিন।
এরপর একটি পরিষ্কার পাত্রে কিছু মিল্টন সাবান ও জল নিয়ে সামগ্রীটি সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
এরপর সামগ্রীটি সাবান দিয়ে ধোয়ার পানি দিয়ে সাফ করে নিন।
ধৌতকরণ শেষ হলে সামগ্রীটি একটি স্পর্শমাত্র রুটি বা টিস্যু পেপার দিয়ে শুকান।
গ্লাসসামগ্রীগুলি শুকানোর জন্য সম্পূর্ণ শুকানো না হওয়া সিদ্ধান্ত নিন।
সামগ্রী শুকানো পর আপনি তা সংগ্রহ করার জন্য একটি পরিষ্কার বা টিস্যু পেপার দিয়ে শুকান।
এই উপায়ে আপনি ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত গ্লাসসামগ্রী ধৌতকরণ করতে পারে
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
রাসায়নিক নিক্তি বা ব্যালেন্সঃ
আয়তনিক বিশ্লেষণ কাজে রাসায়নিক পদার্থকে গ্রাম এককের দশমিক দ্বিতীয় স্থান থেকে চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত নিক্তিকে রাসায়নিক নিক্তি বা কেমিক্যাল ব্যালেন্স (Chemical Balance) বলে। রাসায়নিক নিক্তি দুই প্রকার যথা- পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স এবং সারটোরিয়াস ব্যালেন্স। বর্তমানে সারটোরিয়াস ব্যালেন্সের ব্যবহার না থাকায় কেমিক্যাল ব্যালেন্স রূপে প্রধানত পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স অথবা ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
রাসায়নিক নিক্তির ব্যবহারঃ কেবলমাত্র প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন গ্রাম এককের দশমিক চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে নেয়ার জন্য কেমিক্যাল ব্যালেন্স বা রাসায়নিক নিক্তি ব্যবহৃত হয়। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে এবং ওষুধ শিল্পোৎপাদনে মূলত কেমিক্যাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থঃ প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের চারটি বৈশিষ্ট থাকে। যেমন- এরা বিশুদ্ধ রাসায়নিক পদার্থ, এরা বায়ুর উপাদানের সাথে বিক্রিয়া করে না, রাসায়নিক নিক্তির ক্ষয় করে না, এদের দ্বারা প্রস্তুত দ্রবণের ঘনমাত্রা দীর্ঘদিন অপরিবর্তিত থাকে। এরূপ প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ হলো অক্সালিক এসিড, পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট ইত্যাদি। প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থ থেকে প্রমাণ দ্রবণ (0.1 M) তৈরি করা হয়।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
0.1 mg
0.01 mg
0.001 mg
0.0001 mg
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্স
যে রাসায়নিক ব্যালেন্সে তুলাদণ্ডে বাম পাশে শূণ্য দাগ হতে ডানপাশে 100 টি পর্যন্ত দাগ থাকে তাকে পল বুঙ্গি ব্যালেন্স বলে। পল বুঙ্গি ব্যালেন্সটি 1866 খ্রিস্টাব্দে জার্মান প্রকৌশলী Paul Bunge আবিষ্কার করেন। তার নামানুসারে ব্যালেন্সটির নাম পল বুঙ্গি রাখা হয়েছে। পল বুঙ্গি ব্যালেন্সের সাহায্যে সর্বনিম্ন 0.0001g পর্যন্ত ওজন পরিমাপ করা যায়।
কেবলমাত্র প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন গ্রাম এককের দশমিক চতুর্থ স্থান পর্যন্ত সঠিকভাবে নেয়ার জন্য কেমিক্যাল ব্যালেন্স বা রাসায়নিক নিক্তি ব্যবহৃত হয়। পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে এটির ওপরের বিম বা তুলাদণ্ডকে একশত (100) ভাগে ভাগ করে বাম প্রান্তের দাগে শূন্য (0) ও ডান প্রান্তের দাগে একশত (100) চিহ্নিত থাকে। বা রাইডারকে শূন্য (0) দাগে রেখে ব্যালেন্সের সমতা করা হয়।
পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সের পূর্ণ ব্যবহার বিধি নিম্নরূপ-
প্রথমত নিক্তিটি ভূমির সমান্তরালে আছে কিনা তা স্পিরিট লেভেল বা দোলক দেখে জেনে নিতে হয়। যদি ভূমির সমান্তরালে না থাকে তখন স্পিরিট লেভেলের ভেতরের বুদ্বুদ্ মাঝখানে থকবে না অথবা দোলকের সূঁচালো মুখ ও স্তম্ভের সাথে যুক্ত সূঁচালো মুখ দুটি বরাবর থাকে না। তখন নিক্তিটিকে ভূমির সমান্তরাল করার প্রয়োজন হয়। এজন্য বেদীর সাথে যুক্ত অ্যাডজাস্টিং স্ক্রু ঘুরিয়ে এবং স্পিরিট লেভেল দেখে ব্যালেন্সের বেদীকে ভূমির সমান্তরাল করা হয়।
দ্বিতীয়ত কাচের বক্সের সামনের গ্লাসটিকে ওপর দিকে তোলা হয়। নিক্তিটির স্থির অবস্থায় পাল্লায় কিছু আছে কিনা দেখে নিতে হয়। পাল্লা দুটি পরিষ্কার থাকলে নিক্তির হ্যান্ডল ঘুরিয়ে মাঝখানের পয়ন্টার কাটাটি মূল স্কেলের শূন্য (0) দাগের উভয় দিকে সমান সংখ্যক দাগ অতিক্রম করে দোলে কিনা অথবা ব্যালেন্সটি স্থির হলে পয়ন্টার স্কেলের শূন্য (0) দাগে স্থির থাকে কিনা দেখে নিতে হয়। যদি শূন্য (0) দাগে পয়ন্টার স্থির হয়, তবে নিক্তিটি সমতা অবস্থায় আছে। সমতা অবস্থায় নিক্তি না থাকলে তখন তুলাদণ্ডের দু'পার্শের স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে সমতায় আনতে হয়। শেষে হ্যান্ডল ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে স্থির অবস্থায় রাখা হয়।
তৃতীয়ত ওজন বক্স থেকে 5mg অথবা 10mg রাইডার চিমটার সাহায্যে নিয়ে স্থির অবস্থায় থাকা নিক্তির তুলাদণ্ডের শূন্য (0) দাগের ওপর রাখতে হয় এবং হ্যান্ডল ঘুরিয়ে নিক্তিটিকে সচল করা হয়। এবার নিক্তির তুলাদণ্ডের ডান প্রান্তের স্ক্রু ঘুরিয়ে নিক্তির পয়ন্টারকে মূল স্কেলের শূন্য (0) দাগে আনতে হয়। এ অবস্থায় পল-বুঙ্গী ব্যালেন্সে রাসায়নিক বস্তু ওজন করা যেতে পারে। এরপর রাইডার ধ্রুবক গণনা করে বস্তুর ওজন গ্রহণ করা হয়।
ডিজিটাল ব্যালেন্স
রসায়ন পরীক্ষাগারে বস্তুর ওজন পরিমাপ করার জন্য ডিজিটাল পর্দা সম্বলিত যেসব ইলেকট্রনিক ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয় তাদেরকে ডিজিটাল ব্যালেন্স বলে। ডিজিটাল ব্যালেন্সের ডিজিটাল পর্দায় বস্তুর ওজন ভেসে উঠে। রসায়ন পরীক্ষাগারে দুই ধরনের ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়। 2-ডিজিট ব্যালেন্স ও 4-ডিজিট ব্যালেন্স।
2-ডিজিট ব্যালেন্সঃ যে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ব্যালেন্সে কোনো রাসায়নিক বস্তুর ভর এক গ্রামের দশমিক দ্বিতীয় স্থান (0.01 g) পর্যন্ত সঠিকভাবে ওজন করা সম্ভব হয়, তাকে 2-ডিজিট ব্যালেন্স বলা হয়। সাধারণত সেকেন্ডারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ওজন করার জন্য 2-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়। পূর্বে ব্যবহৃত রাফ ব্যালেন্সের স্থলে বর্তমানে 2-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহৃত হয়।
4-ডিজিট ব্যালেন্সঃ যে ইলেকট্রনিক ডিজিটাল ব্যালেন্সে কোনো প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের ভর এক গ্রামের দশমিক চতুর্থ স্থান (0.0001 g) পর্যন্ত সঠিকভাবে ওজন করা সম্ভব হয়, তাকে 4-ডিজিট ব্যালেন্স বলা হয়। 4-ডিজিট ব্যালেন্স খুব সংবেদনশীল বা sensitive হওয়ায় রাসায়নিক বিশ্লেষণীয় কাজে ব্যবহৃত প্রমাণ দ্রবণ তৈরিতে সংশ্লিষ্ট পদার্থের সঠিক ওজন নিতে 4-ডিজিট ব্যালেন্স ব্যবহার করা হয়।
ব্যবহারের ক্ষেত্রঃ 2-ডিজিট ব্যালেন্স দ্বারা 1g এর ভাগে এক ভাগ অর্থাৎ 0.01g ভর পর্যন্ত সঠিকভাবে মাপা যায়। কিন্তু 4-ডিজিট ব্যালেন্স দ্বারা 1g এর ভাগে এক ভাগ অর্থাৎ 0.0001g ভর পর্যন্ত সঠিকভাবে মাপা যায়। পূর্বে ব্যবহৃত রাফ ব্যালেন্সের স্থলে 2-ডিজিট ব্যালেন্স ম্যাক্রো ও সেমি মাইক্রো গুণগত বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় বিকারক প্রস্তুতিতে বস্তুর ভর পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- কস্টিক সোডা পিলেট, অক্সালিক এসিড ইত্যাদি।
অপরদিকে, 4-ডিজিট ব্যালেন্স সেমি মাইক্রো ও মাইক্রো গুণগত ও ভরভিত্তিক আয়তনিক বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় প্রাইমারি স্ট্যান্ডার্ড পদার্থের প্রমাণ দ্রবণ প্রস্তুতিতে বস্তুর ভর পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। যেমন- অক্সালিক এসিড ,পটাসিয়াম ডাইক্রোমেট ,সোডিয়াম থায়োসালফেট ইত্যাদি।
কাঁচ একটি উত্তম বিদ্যুৎ পাঠক এবং তাপ নির্ভরশীল মালমূল্য উৎপাদ করতে পারে। কাঁচের যন্ত্রপাতি হল উপাদান তৈরি করার জন্য একটি প্রক্রিয়া, যা পরবর্তীতে কাঁচ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। কাঁচের উপাদান তৈরির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান হল শিলিকা। শিলিকা হল সিলিকন ডাইঅক্সাইড বা SiO2 এর একটি আণবিক বিন্যাস যা উপাদান তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
আয়তনিক বিশ্লেষণে কাঁচের যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় পরিবেশে শিলিকা ও আরও কিছু উপাদান সহ একটি কাঁচ মিশ্রণ তৈরি করে। এরপর মিশ্রণটি একটি ফার্নেসে নিউন দিয়ে তাপ প্রদান করে এবং একটি সংকলন দেওয়া হয়। এরপর মিশ্রণটি ঝুলন দেওয়া হয় যাতে তাপ সমানভাবে বিত্তিকভাবে বিতরণ হয়।
কনিকেল ফ্লাক্স ব্যবহার করার কৌশল:
১। কনিকেল ফ্লাক্স ব্যবহার করার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
২। ফ্লাক্সটি আবার সেদ্ধ করে নিবেন এবং নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখবেন।
৩। ফ্লাক্সটি একটি পাত্রে ঢেলে দিন এবং সামান্য পানি দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
৪। ফ্লাক্স মিশ্রণটি দড়িয়ে নিন এবং সেদ্ধ পানিতে ঢেলে দিন।
৫। সেদ্ধ হয়ে গেলে, কনিকেল ফ্লাক্স দুধ বা পানি দিয়ে মিশিয়ে নিন।
ওয়াশ বোতল ব্যবহার করার কৌশল:
১। প্রথমে ওয়াশ বোতলটি নিশ্চিত করুন যে এর পিছনে কোন ধূলো নেই।
২। ওয়াশ বোতলটি উপযুক্ত ধোঁয়া সাবান এবং পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
৩। একটি ব্রাশ ব্যবহার করে বোতলের অভ্যন্তরে লাগা কোনও অশুদ্ধি সাফ করে নিন।
ব্যুরেট ব্যবহার করার কৌশল: ১। ব্যুরেটটি ব্যবহার করার আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
২। ব্যুরেটটি উপযুক্ত সাবান এবং পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
৩। ব্যুরেটটি উপযুক্ত ডিটারজেন্ট দিয়ে সাফ করা যেতে পারে।
৪। ব্যুরেট উপযুক্ত পরিমাণ সাবান এবং পানি দিয়ে আবার ধুয়ে নিন।
৫। পরে, ব্যুরেটটি ধুয়ে ওঠানো পানিতে ভিজিয়ে দিন এবং শুকানো পর্জন্যে একটি পুশপ ব্যবহার করে শুকিয়ে নিন।
পিপেট ব্যবহার করার কৌশল: ১। প্রথমে পিপেটটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
২। পিপেটটি উপযুক্ত সাবান এবং পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
বুনসেন বার্নার (ইংরেজি: Bunsen burner) গবেষণাগারে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে রক্ষিত একখণ্ড সাধারণ উপকরণ। মূলতঃ রসায়ন বিষয়ে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদানের দহনক্রিয়া সংঘটন, জীবাণু ধ্বংস সাধনের লক্ষ্যে যথোপযুক্ত উত্তাপের জন্যে বুনসেন বার্নার বা জ্বলন্ত স্টোভজাতীয় যন্ত্রের প্রয়োজন পড়ে। আগুনের সাহায্যে প্রজ্জ্বলিত গ্যাসে যন্ত্রটি কাজ করে। যন্ত্রটি বিভিন্ন ধরনের শিখার জন্ম দেয় এবং প্রত্যেকটি শিখাই স্বতন্ত্র রঙের হয়ে থাকে। এটি প্রচণ্ড উত্তাপের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এর তাপ প্রদানের সক্ষমতা ১৩০০° সে. থেকে ১৬০০° সে. এর মধ্যে হয়ে থাকে।প্রাকৃতিক গ্যাস বিশেষ করে মিথেন কিংবা প্রোপেন, বিউটেন অথবা উভয়ের সংমিশ্রণে গঠিত এলপিজি বা তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস এ যন্ত্রের প্রধান উপকরণ।

ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তাপ দেওয়ার কয়েকটি কৌশল নিম্নলিখিত হতে পারে:
১. একটি ওভেন ব্যবহার করুন: একটি ওভেন ব্যবহার করে আপনি বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তাপ দিতে পারেন। ওভেনে আপনি তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং বিভিন্ন সময়ের জন্য তাপমাত্রা সেট করতে পারেন।
২. হট প্লেট ব্যবহার করুন: হট প্লেট ব্যবহার করে আপনি তাৎক্ষণিক তাপ প্রদান করতে পারেন। এটি আপনাকে স্বল্প সময়ে একটি পরিষ্কার এবং নিরাপদ উপায়ে যন্ত্রপাতি তাপ দেওয়ার সুযোগ দেয়।
৩. স্টারিলাইজার ব্যবহার করুন: স্টারিলাইজার ব্যবহার করে আপনি যন্ত্রপাতি তাপ দিতে পারেন। স্টারিলাইজারে আপনি যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং তাপমাত্রা সেট করতে পারেন।
রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ ও ব্যবহারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা
পরীক্ষণ ছাড়া রসায়নে যেমন অনুসন্ধান ও গবেষণা করা কঠিন, তেমনি রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার ব্যতীত রসায়নে পরীক্ষণ সাধারণত করা হয় না। অনেক রাসায়নিক পদার্থই স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে মারাত্বক ক্ষতি করে থাকে। অনেক দ্রব্য আছে যারা অতি সহজেই বিস্ফোরিত হতে পারে,বিষাক্ত, দাহ্য, স্বাস্থ্য সংবেদনশীল এবং ক্যান্সার সৃষ্টিকারী। তাহলে রাসায়নিক দ্রব্য সংগ্রহ এবং তা দিয়ে পরীক্ষণের পূর্বেই তার কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা খুবই জরুরি।তাই আমাদের জানতে হবে কিভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ করতে হয়? ও রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণে সতর্কতামূলক চিহ্ন।
সারাবিশ্বে পরীক্ষাগার বা গবেষণাগার, শিল্প-কারখানা, কৃষি, চিকিৎসা প্রভৃতি ক্ষেত্রে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার তথা রাসায়নিক দ্রব্যের বাণিজ্য বেড়ে যাওয়ায় এদের সংক্ষণ ও ব্যবহারের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জরুরি হয়ে পড়ে। এ সংক্রান্ত একটি সর্বজনীন নিয়ম (Globally Harmonized System) চালুর বিষয়কে সামনে রেখে জাতিসংঘের উদ্যোগে পরিবেশ ও উন্নয়ন নামে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- (ক) রাসায়নিক পদার্থকে ঝুঁকি ও ঝুঁকির মাত্রার ভিত্তিতে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা, (খ) ঝুঁকির সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত ডাটাবেজ তৈরি করা এবং (গ) ঝুঁকি (hazard) ও ঝুঁকির মাত্রা বুঝাবার জন্য সর্বজনীন সাংকেতিক চিহ্ন নির্ধারণ করা। কোনো রাসায়নিক দ্রব্য সরবরাহ বা সংরক্ষণ করতে হলে তার পাত্রের গায়ে লেবেলের সাহায্যে শ্রেণিভেদ অনুযায়ী প্রয়ােজনীয় সাংকেতিক চিহ্ন প্রদান রা অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। তাহলে ব্যবহারকারী সহজেই কোনাে রাসায়নিক দ্রব্যের পাত্রের গায়ে লেবেল দেখেই এর কার্যকারিতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিতে পারবে এবং এর কার্যকারিতার ঝুঁকি মাথায় রেখে সংরক্ষণ ও ব্যবহার রতে পারবে।
যেমন বিপদজনক সাংকেতিক চিহ্ন সংবলিত কোনাে পাত্রের গায়ের লেবেল দেখে এটা বুঝা যাবে যে, পাত্রের রাসায়নিক দ্রব্যটি একটি মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থ। সাথে সাথে ব্যবহারকারীর মাথায় এটাও কাজ করবে যে, ব্যবহারের সময় অবশ্যই বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে এটা শরীরের ভিতরে প্রবেশ করতে না পারে। এছাড়াও পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণ উন্মুক্ত পরিবেশ ফেলে দেওয়া যাবে কি না বা পরিশােধন হবে কি না, সে সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবে। সংগৃহীত রাসায়নিক দ্রব্য কোথায়, কীভাবে সংরক্ষণ করলে রাসায়নিক দ্রব্যের মান ঠিক থাকবে ও অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা এড়ানাে যাবে, সেসব ধারণাও পাওয়া যাবে।
রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণে ঝুঁকির মাত্রা ও সাবধানতা ও চিহ্ন
বিস্ফোরিত বোমা চিহ্ন
বিস্ফোরক (explosive) দ্রব্য, নিজে নিজেই বিক্রিয়া করতে পারে, যেমন– জৈব পার-অক্সাইড। নির্জন জায়গায় সংরক্ষণ করা, সাবধানে নাড়াচাড়া করা, ঘর্ষণ হতে পারে এমন জায়গায় না রাখা, অন্য পদার্থের সাথে মিশ্রণের সময় অতি ধীরে যুক্ত করা, ব্যবহারের সময় চোখে নিরাপদ চশমা পরা।
আগুনের শিখা চিহ্ন
দাহ্য (flammable) পদার্থ- গ্যাস, তরল, কঠিন। সহজেই আগুন ধরতে পারে। বিক্রিয়া করে তাপ উৎপন্ন করে, যেমন— অ্যারােসােল, পেট্রোলিয়াম। এ ধরনের দ্রব্য আগুন বা তাপ থেকে দূরে রাখা, ঘর্ষণ হতে পারে এমন অবস্থায় না রাখা।
বৃত্তের উপর আগুনের শিখা চিহ্ন
জারক (oxidizing agent) গ্যাস বা তরল পদার্থ, যেমন- ক্লোরিন গ্যাস। নিঃশ্বাসে গেলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে, ত্বকে লাগলে ক্ষত হতে পারে। গ্যাস হলে নিচ্ছিদ্রভাবে রাখা, জারণ বিক্রিয়া করতে পারে এমন পাত্রে না রাখা, ব্যবহারের সময় হাতে সুনির্দিষ্ট দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা।
বিপদজনক চিহ্ন
মারাত্মক বিষাক্ত পদার্থ (poison)- গ্যাস, তরল, কঠিন। নিশ্বাসে, ত্বকে লাগলে অথবা খেলে মৃত্যু হতে পারে। এ ধরনের পদার্থ অবশ্যই তালাবদ্ধ স্থানে সংরক্ষণ করা বাঞ্ছনীয়। ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক (গ্যাস হলে) ব্যবহার করা। শরীরে প্রবেশ করতে পারে এমন অবস্থা এড়িয়ে চলা। পরীক্ষার পর পরীক্ষণ মিশ্রণের যথাযথ পরিশােধন করা।
স্বাস্থ্য ঝুঁকির সংকেত চিহ্ন
দেহের শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত (respiratory) তন্ত্রের জন্য সংবেদনশীল, জীবানু সংক্রমণ ঘটাতে পারে (mutagenic), ক্যান্সার সৃষ্টি (carcinogenic) করতে পারে। সর্বসাধারণের বাইরে নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করা, ব্যবহারের সময় হাতে দস্তানা, চোখে নিরাপদ চশমা ও নাকে-মুখে মাস্ক ব্যবহার করা। পরীক্ষণ মিশ্রণের সংগ্রহ ও যথাযথ পরিশােধন করা।
পরিবেশ চিহ্ন
পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষ করে জলজ (aquatic) উদ্ভিদ ও প্রাণির জন্য ক্ষতিকর। এ ধরনের পদার্থ নদী-নালার পানিতে মিশতে দেওয়া উচিত নয়। পরীক্ষণ মিশ্রণ সংগ্রহ ও পরিশােধন করা।
তেজস্ক্রিয় রশ্মি চিহ্ন
আন্তর্জাতিক রশ্মি চিহ্নটি ১৯৪৬ সালে আমেরিকাতে প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিল। চিহ্নটিকে ট্রিফয়েল (trefoil) ও বলা হয়। এটি দ্বারা অতিরিক্ত ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয় রশ্মিকে (শক্তি) বুঝানাে হয়। এধরনের রশ্মি মানবদেহকে বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে এবং শরীরে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। রশ্মি বের হতে না পারে এরকম ধরনের পুরু বা বিশেষ পাত্রে রাসায়নিক দ্রব্যাদি সংরক্ষণ করা। কাজ করার সময় নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, উপযুক্ত পােশাক পরিধান করা, চোখে বিশেষ ধরনের
চশমা পরা ইত্যাদি।
# বহুনির্বাচনী প্রশ্ন
রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য কিছু সাধারণ নিয়মাবলি নিম্নলিখিত হতে পারে:
১। স্টোরেজ এলাকার ভার্চুয়ালি এবং ফিজিক্যালি সম্পূর্ণ রূপে নির্ধারিত হতে হবে।
২। স্টোরেজ এলাকা হতে পারে খালি বা মাত্রা একটি ধরণের পণ্যে সীমাবদ্ধ হতে হবে।
৩। সংগ্রহকৃত রাসায়নিক দ্রব্যগুলি ভালোভাবে পরিচ্ছন্ন এবং পরিস্কার রাখতে হবে।
৪। সংগ্রহকৃত রাসায়নিক দ্রব্য গুলি উচ্চ তাপমাত্রায় এবং আলোকের সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে না।
৫। নির্দিষ্ট রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণ করার জন্য নির্দিষ্ট ভার্চুয়াল এবং ফিজিক্যাল এলাকার জন্য স্পেশাল জার সংরক্ষণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
৬। সংরক্ষিত রাসায়নিক দ্রব্যগুলি ব্যবহার করার পূর্বে উচ্চতম মাত্রার সুষম পরীক্ষা করা উচিত।
রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার একটি সমস্যাপূর্ণ কাজ হতে পারে, যেটি নিয়মিত সতর্কতা এবং সঠিক ব্যবহার না করলে জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে। তাই রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহারে সতর্ক হওয়া উচিত।
কিছু রাসায়নিক দ্রব্য দুর্বল এবং অস্থির হওয়া সম্ভব এবং এদের সম্পর্কে আগে থেকেই জানা উচিত। এছাড়া রাসায়নিক দ্রব্যের সাথে কাজ করার সময় হাত শুধুই পরিষ্কার এবং উপযোগে সামগ্রী একটি বড় পরিমাণে উপস্থিত থাকতে উচিত। এছাড়া একটি বিশেষজ্ঞের নির্দেশনা অনুসরণ করা উচিত, যাতে সঠিক পরিমান এবং ব্যবহারের নির্দেশনা পাওয়া যায়।
সর্বশেষ, রাসায়নিক দ্রব্যের সাথে কাজ করার পর উপস্থিত কাজের সামগ্রী এবং মেশিন পরিষ্কার করে রাখা উচিত, যাতে এগুলো পরবর্তীতে কাজে ব্যবহৃত হতে পারে।
বিষাক্ত বিকার হল একটি ক্ষতিকর বিকার যা জীবনশক্তির নষ্টকর। কিন্তু কিছু বিকল্প উপাদান ব্যবহার করা যেতে পারে যা ক্ষতিকর নয়। কিছু উপাদানের মধ্যে কিছু উল্লেখ করা হলো:
১. স্থানান্তরকারী সংযোজক: স্থানান্তরকারী সংযোজকগুলি বিভিন্ন রকমের পরিবর্তনশীল অক্সিজেন কম্পাউন্ড যেমন নাইট্রোজেন ও কার্বন মনোক্সাইড সহ বিভিন্ন ধরনের গ্যাস পরিবর্তন করে। এগুলি জীবনশক্তি প্রভাবিত না করে ক্ষতিকর বিকার ব্যতিত জীবনশক্তির সম্পদ উপহার করে।
২. বিষহীন উপাদান: কিছু উপাদান বিষহীন হওয়ায় তাদের ব্যবহার করা সুরক্ষিত হতে পারে। এগুলি অ্যালকোহল, সবুজ শক্তি, পানি ইত্যাদি।
ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের নিরাপদ সংরক্ষণ এবং বর্জ্য অপসারণ দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সমস্যা নির্বাচন ও সমাধানে বিভিন্ন বিষয়গুলি রয়েছে, যা নিম্নলিখিত হল:
ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য পরীক্ষা করা উচিত। ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য যদি নিরাপদ হয় তবে এর ব্যবহার সম্ভব। পরীক্ষা করা যেতে পারে এমন ব্যবহার করা উচিত যা পর্যায়ক্রমে অস্থায়ী বা স্থায়ী অবস্থান পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে।
ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য একটি উচ্চ ধারণাশীল পাকবিদ্যা হওয়া উচিত। ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য সম্ভবতঃ জীবন ও পরিবেশে সমস্যার উৎস হতে পারে। একটি উচ্চ ধারণাশীল পাকবিদ্যা নির্ভরশীল হওয়া উচিত যা ব্যবহারের জন্য সুরক্ষিত হবে এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য পরিবেশের উপর প্রভাব প্রয়োজনীয় সমস্যার একটি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার বেশী হয়ে উঠেছে এবং এর ফলে পরিবেশের সমস্যা হচ্ছে।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য পরিবেশের জীব জন্তুদের উপর দুর্ঘটনাগ্রস্ত প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য পরিবেশে বিভিন্ন পদার্থ যোগ করে থাকতে পারে যা পরিবেশের জীব জন্তুদের উপর একটি বিপদজনক প্রভাব ফেলে দিতে পারে।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্য পরিবেশে প্রবেশ করলে এর বিভিন্ন অসংখ্য প্রভাব হতে পারে যেমন বায়োমাগনিটোসিস এবং পারজনিত নির্মলতা হ্রাস।
পরিবেশের ওপর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত দ্রব্যের প্রভাব:
'পরিবেশে' বলতে প্রত্যেক জীবের চারপাশের সজীব ও নির্জীব উপাদানসমূহের সমাবেশকে বোঝায়। বর্জ্য রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ পরিবেশের ওপর কম বেশি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব সৃষ্টি করে। কেমিস্ট্রি ল্যাবরেটরিতে প্রতিদিন ব্যবহৃত কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বিভিন্ন গুণসম্পন্ন রাসায়নিক পদার্থ বর্জ্যরূপে পরিবেশে সহজে মিশে যায়। মাত্রাতিরিক্ত এ সব ক্ষতিকর বর্জ্য পদার্থ মাটি, পানি ও বায়ুমণ্ডলের মারাত্মক দূষণ ঘটায়।
ল্যাবরেটরিতে অধিক ব্যবহৃত ও পরিবেশের ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্যসমূহ হলো: MIK
(ক) অজৈব এসিড যেমন, হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCI), নাইট্রিক এসিড (HNO₁), সালফিউরিক এসিড (H₂SO₄) ইত্যাদি।
খ) অজৈব ক্ষার যেমন, কস্টিক সোডা (NaOH), কস্টিক পটাস (KOH), লিকার অ্যামোনিয়া (35-40% NH₃ দ্রবণ), সোডিয়াম কার্বনেট (Na2CO3)।
(গ) ধাতব লবণসমূহ যেমন, লেড (Pb), মারকারি (Hg), সিলভার (Ag), অ্যান্টিমনি (Sb), টিন (Sn), আয়রন Fe), অ্যালুমিনিয়াম (Al), ক্রোমিয়াম (Cr), জিংক (Zn), কোবাল্ট (Co), নিকেল (Ni), ম্যাঙ্গানিজ (Mn), ক্যালসিয়াম
( (Ca), বেরিয়াম (Ba), স্ট্রনসিয়াম (Sr), সোডিয়াম (Na), পটাসিয়াম (K), ম্যাগনেসিয়াম (Mg) ইত্যাদি ধাতুর বিভিন্ন হ্যালাইড, নাইট্রেট, সালফেট, কার্বনেট ও ফসফেট লবণ।
(ঘ) জৈব দ্রাবক ও বিকারক যেমন, মিথানল, ইথানল, অ্যাসিটোন, ক্লোরোফরম, ক্লোরোবেনজিন, টলুইন, জাইলিন,
অ্যানিশিন ইত্যাদি।
ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষা কাজে ব্যবহৃত এসব রাসায়নিক বর্জ্য পদার্থ বায়ুতে, পানিতে ও মাটিতে মিশে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। যেমন-
*(১) ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত এসিড (HCI বা, HNO, বা, H₂SO₄) অথবা অতিরিক্ত ক্ষার (NaOH বা, KOH) বর্জ্যরূপে ড্রেনের পানির সাথে নিকটস্থ বিভিন্ন জলাশয়ে ও মাটিতে মিশে যায়। তখন ঐ পানি বা মাটির অম্লত্ব বা ক্ষারকত্বের অর্থাৎ pH মানের মারাত্মক হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। মাটির অনুকূল pH 7.0-8.0 থেকে খুব বেশি হ্রাস বা বৃদ্ধি ঘটলে মাটির অণুজীব ধ্বংস এবং উর্বরতা নষ্ট হয়। জলাশয়ে পানির pH এর মান 3 এর নিচে হলে জলজ উদ্ভিদ ও মাছ মারা যায়।
*(২) ভারী ধাতুর আয়ন যেমন Pb2+, Hg2+, Cd2+, Cr³+ আয়ন দ্বারা দূষিত পানি থেকে এসব আয়ন মাছের দেহে এবং দূষিত মাটি থেকে উদ্ভিদ দেহে শোষিত হয়। পরে খাদ্যশৃঙ্খলের মাধ্যমে এসব ভারী ধাতুর আয়ন মানবদেহের চর্বিতে শোষিত হয়ে মারাত্মক রোগ যেমন স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি ও প্রজননতন্ত্রে বিভিন্ন রোগ ও ক্যান্সার সৃষ্টি করে।
*(৩) অনেক উদ্বায়ী জৈব যৌগের বাষ্প বায়ুতে মিশে যায়। এছাড়া রসায়ন পরীক্ষাগারে বিভিন্ন বিক্রিয়ায় উৎপন্ন গল্পসসমূহ যেমন CO2, NO2, SO₂ ও HCI(g) ইত্যাদি অম্লধর্মী গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়। বায়ুদূষণের ফলে শ্বাসযন্ত্রে বিভিন্ন
রোগ সৃষ্টি হয়।
পরিবেশ ও স্বাস্থ্যের ওপর ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক দ্রব্যের প্রভাব
রাসায়নিক ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন প্রকার এসিড, শক্তিশালী ক্ষার, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন ধাতুর লবণ, বিভিন্ন জৈব দ্রাবক ব্যবহৃত হয়।
ল্যাবরেটরিতে এগুলোর অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে তা কোনো না কোনোভাবে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণিদেহে প্রবেশ করে। এর ক্ষতিকর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি। ল্যাবরেটরিতে এদের অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। ভারী ধাতুর আয়ন Pb2+, H g^ 2+ Cd2+ প্রাণিদেহে প্রবেশ করলে প্রাণিদেহের এনজাইমের কার্যক্ষমতা বিনষ্ট হয় এবং সাথে সাথে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটে।
বিভিন্ন ভারী শিল্প কারখানা যেমন-চামড়া শিল্প, ডাইং শিল্প, কাগজ, রেয়ন, সার ইত্যাদি শিল্পক্ষেত্রের ল্যাবরেটরিতে পরিবেশের উপর মারাত্মক ক্ষতিকর উপাদানের ব্যবহার হয়ে থাকে। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার পরিবেশের জন্য যে কতটা ক্ষতিকারক তা কল্পনা করা যায় না। এসব রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার খুবই স্বল্পমাত্রায় এবং নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা উচিত। তাই এসব শিল্প কারখানা স্থাপনের পূর্বে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পূর্ব অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয়।
রাসায়নিক দ্রব্যের পরিমিত ব্যবহার বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় কারণ এর বিপদজনক প্রভাব পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের উপর পড়ে।
প্রথম কথায়, রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হলে সেই দ্রব্যের বিপদজনক প্রভাব থেকে লোকজন সুরক্ষিত থাকতে পারে। এটি সুরক্ষা করতে সম্ভব হলে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করা উচিত।
দ্বিতীয়তঃ, পরিমিত ব্যবহার করা দ্রব্য এর মাধ্যমে এনভায়রনমেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি কম হয়। রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা না করলে সেই দ্রব্য পরিবেশের জীব জন্তুদের ও মানব স্বাস্থ্যকে বিপদজনক প্রভাব ফেলতে পারে। একটি উদাহরণ হল ফসফরাস। যদি বেশী ফসফরাস ব্যবহার করা হয় তবে পরিবেশের মাধ্যমে এর মাধ্যমে এসিড বৃদ্ধি হয়
সেমি মাইক্রো ও মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপঃ
১. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে 0.05g - 0.2g কঠিন নমুনা ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু, মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে 0.005g - 0.02g কঠিন নমুনা ব্যবহার করা হয়।
২. সেমি মাইক্রো পদ্ধতিতে 2ml - 4ml আয়তনের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু, মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে 0.2ml - 1ml আয়তনের দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
৩. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণে যৌগের পৃথকীকরণ, পরিমাণগত বিশ্লেষণ ও কাঠামো নির্ণয় করতে ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু, মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অধঃক্ষেপণ পদ্ধতিসহ বেয়ার ল্যাম্বার্ট সূত্র ভিত্তিক ক্রোমাটোগ্রাফি ও স্পেকট্রোমিটার ব্যবহার করা হয়।
৪. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে উৎপন্ন বর্জ্যের পরিমাণ মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির থেকে বেশি হয়। কিন্তু, মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে উৎপন্ন বর্জ্যের পরিমাণ সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির থেকে কম হয়।
৫. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে তরল নমুনা পরিমাপ করার জন্য সেমি মাইক্রো ক্যাপিলারি টিউব ব্যবহার করা হয়।
কিন্তু, মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে তরল নমুনা পরিমাপ করার জন্য মাইক্রো ক্যাপিলারি টিউব ব্যবহার করা হয়।
সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির যন্ত্রপাতি সমূহসেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে যন্ত্রপাতি দাম কম এবং ব্যয়ও কম হয়। এই পদ্ধতিতে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি গুলো নিম্নরূপঃ
১. 4cc(75x10mm) বা 8cc(100x12mm) আয়তনের পাইরেক্স টেস্টটিউব ব্যবহার করা হয়।
২. 3cc(76x11mm) আয়তনের সরু তলাবিশিষ্ট সেন্ট্রিফিউজ নল ব্যবহার করা হয়।
৩. 30ml, 60ml, 125ml আয়তনের বিন্দুপাতি নলযুক্ত বিকারক বোতল ব্যবহার করা হয়।
৪. 12cm লম্বা ক্ষুদ্রাকৃতির নিকেলের তৈরি স্প্যাচুলা ব্যবহার করা হয়।
৫. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে 250ml আয়তনের ওয়াটার বাথ ব্যবহার করা হয়।
৬. 20cm লম্বা এবং 5mm ব্যাসের কাচ নলের এক প্রান্ত পুড়িয়ে ড্রপিং টিউব তৈরি করা হয়।
৭. হস্তচালিত এবং বিদ্যুৎ চালিত দুই ধরনের সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। একটি টেস্টটিউবে পরীক্ষণীয় বস্তু এবং অন্য টেস্টটিউবে সমআয়তনের পানি নিয়ে সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রকে ঘোরানো হয়। এভাবে কিছুক্ষণ ঘোরালে টেস্টটিউবে পরীক্ষণীয় বস্তুর অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়।
৮. 50ml, 100ml, 200ml,250ml আয়তনের পাইরেক্স দ্বারা তৈরি বিকার ব্যবহার করা হয়।
৯. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে সাধারণত 25ml, 50ml আয়তনের ব্যুরেট ব্যবহার করা হয়।
১০. বিকারক স্থানান্তরের কাজে বিভিন্ন আকারের বিকারক ড্রপার ব্যবহার করা হয়।
ম্যাক্রো ও সেমিমাইক্রো বিশ্লেষণের মধ্যে তুলনা
ম্যাক্রো ও সেমিমাইক্রো বিশ্লেষণ দুটিই রাসায়নিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি, তবে এদের মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। আসুন তাদের মধ্যে তুলনা করে দেখি:
ম্যাক্রো বিশ্লেষণ
- পরিমাণ: সাধারণত বড় পরিমাণে নমুনা ব্যবহার করা হয়।
- পাত্র: বড় আকারের পাত্র যেমন বিকার, ফ্লাস্ক ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
- প্রতিক্রিয়া: প্রতিক্রিয়াগুলি সাধারণত দৃশ্যমান হয়।
- সুবিধা: সরাসরি দৃশ্যমান ফলাফল পাওয়া যায়।
- অসুবিধা: বেশি পরিমাণে রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন, বেশি সময়সাপেক্ষ, এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
সেমিমাইক্রো বিশ্লেষণ
- পরিমাণ:
- ম্যাক্রো বিশ্লেষণের তুলনায় কম পরিমাণে নমুনা ব্যবহার করা হয়।
- পাত্র: ছোট আকারের পাত্র যেমন পরীক্ষানলী, ছোট বিকার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
- প্রতিক্রিয়া: প্রতিক্রিয়াগুলি ক্ষুদ্র পরিসরে হয়।
- সুবিধা: কম পরিমাণে রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন, কম সময়সাপেক্ষ, পরিবেশবান্ধব, এবং স্পষ্ট ফলাফল পাওয়া যায়।
- অসুবিধা: ছোট আকারের কারণে পরিমাপে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে।
তুলনামূলক তালিকা
| বৈশিষ্ট্য | ম্যাক্রো বিশ্লেষণ | সেমিমাইক্রো বিশ্লেষণ |
|---|---|---|
| নমুনার পরিমাণ | বেশি | কম |
| পাত্রের আকার | বড় | ছোট |
| প্রতিক্রিয়া | দৃশ্যমান | ক্ষুদ্র পরিসরে |
| সুবিধা | সরাসরি ফলাফল | কম রাসায়নিক, কম সময় |
| অসুবিধা | বেশি রাসায়নিক, বেশি সময় | পরিমাপে অসুবিধা |
সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির সুবিধা কি?
সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতির সুবিধাগুলি নিম্নরূপঃ
১. সেমি মাইক্রো বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নমুনার পরিমাণ কম লাগে। বিধায় খরচ কম হয়।
২. রাসায়নিক দ্রব্যের অপচয় ঘটে না।
৩. বর্জ কম উৎপন্ন হয় ফলে পরিবেশ দূষণ অনেকাংশে হ্রাস পায়।
৪. বিশ্লেষণে সময় কম লাগে।
৫. যন্ত্রপাতির আকার গুলো ছোট হয়।
৬. সেমি মাইক্রো পদ্ধতিকে অল্প পরিমাণ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয় বলে যন্ত্রপাতি আকারে ছোট হয়। ফলে প্রতিটি শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা বিকারক সেলফ ও লকারের ব্যবস্থা করা যায়।
৭. এ বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কম ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা যায়। যেমনঃ অজৈব লবণের গুণগত বিশ্লেষণ সরাসরি বিষাক্ত হাইড্রোজেন সালফাইড(H₂S) ব্যবহারের পরিবর্তে দ্রবণে থায়োঅ্যাসিটামাইড(CH₃-CS-NH₂) ব্যবহার করা হয়। এটি পানির সাথে বিক্রিয়া করে দ্রবণে H₂S উৎপন্ন করে। যা দ্রবণে থেকে যায়, ফলে পরিবেশ দূষিত হয় না।
CH₃-CS-NH₂+ H₂O ----> H₂S + CH₃-CO-NH₂
ল্যাবরেটরিতে নিরাপত্তা সামগ্রী ও ব্যবহার বিধি
ল্যাবরেটরি হলো বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক পদার্থ, যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। কিন্তু এই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ, অনেক রাসায়নিক পদার্থ বিষাক্ত বা জ্বলনশীল হতে পারে। তাই ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার এবং নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরূরী।
ল্যাবরেটরিতে ব্যবহৃত সাধারণ নিরাপত্তা সামগ্রী
- লেব কোট: এটি শরীরকে রাসায়নিক পদার্থের ছিটকে পড়া থেকে রক্ষা করে।
- সুরক্ষা চশমা: চোখকে রাসায়নিক পদার্থের ছিটকে পড়া থেকে রক্ষা করে।
- গ্লাভস: হাতকে রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা থেকে রক্ষা করে।
- মাস্ক: বিষাক্ত বা জ্বালাময় গ্যাস থেকে শ্বাসতন্ত্রকে রক্ষা করে।
- ফায়ার এক্সটিংগুইশার: আগুন লাগলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহৃত হয়।
- ফার্স্ট এইড বক্স: দুর্ঘটনার সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য।
ল্যাবরেটরিতে নিরাপত্তা বিধি
- সর্বদা ল্যাব কোট, সুরক্ষা চশমা এবং যথাযথ গ্লাভস পরে কাজ করুন।
- খাবার খাওয়া, পান করা বা ধূমপান করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
- রাসায়নিক পদার্থের সঙ্গে খেলা করবেন না।
- কোনো রাসায়নিক পদার্থের গন্ধ নেওয়ার আগে শিক্ষকের অনুমতি নিন।
- রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রণ করার আগে শিক্ষকের নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
- আগুন লাগলে অবিলম্বে শিক্ষককে জানান এবং ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করুন।
- কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অবিলম্বে শিক্ষককে জানান।
- ল্যাবরেটরি পরিষ্কার রাখুন।
- ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থকে নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলে দিন।
কেন ল্যাবরেটরিতে নিরাপত্তা বিধি মেনে চলা জরুরি?
- দুর্ঘটনা প্রতিরোধ: নিরাপত্তা বিধি মেনে চললে ল্যাবরেটরিতে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কমে যায়।
- স্বাস্থ্য রক্ষা: বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে আসা থেকে নিজেকে রক্ষা করে স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায়।
- পরিবেশ রক্ষা: নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চললে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যায়।
ল্যাবরেটরিতে থাকা দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয় এমন কিছু দ্রব্য রয়েছে যা প্রকাশক্রমে জ্বলনশীল গ্যাস, তরল আদ্রতা এবং বিস্ফোরণশীল হতে পারে। যেমন, লবণ বা আয়ডিন জ্বলনশীল গ্যাস হতে পারে এবং পটাশিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণশীল হতে পারে। এই ধরনের দ্রব্যগুলি দহনশীল হয় এবং উন্নয়ন এর সময় অবশ্যই সতর্কতার সাথে ব্যবহার করতে হয়।
এই ধরনের দ্রব্যগুলি ব্যবহার করার সময় কিছু সতর্কতার মানদণ্ড অনুসরণ করা উচিত, যেমন -
- উপযুক্ত প্রশিক্ষিত কর্মী দ্বারা সম্পূর্ণ সতর্কতার সাথে ব্যবহার করা উচিত।
- দ্রব্যটি সংরক্ষণ এবং ব্যবহারের জন্য উপযোগী স্থানে রাখা উচিত।
ল্যাবরেটরিতে অগ্নি-নিরোধ ব্যবস্থা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোন ল্যাবে কাজ করার সময় দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয় যা প্রকাশক্রমে জ্বলনশীল গ্যাস, তরল আদ্রতা এবং বিস্ফোরণশীল হতে পারে। এক্ষেত্রে অগ্নি-নিরোধ ব্যবস্থা না থাকলে দুর্ঘটনা হতে পারে এবং জীবন বাঁচানো অসম্ভব হতে পারে।
অগ্নি-নিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত:
১. ল্যাবে নির্দিষ্ট স্থান হতে হবে যেখানে দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়।
২. সম্পূর্ণ ল্যাবে অগ্নি নিরোধক সহযোগিতা সরবরাহ করা উচিত। এটি অগ্নি বা জ্বলনশীল পদার্থের জন্য সম্পূর্ণ ল্যাব সুরক্ষিত করতে সাহায্য করে।
Read more






